Tuesday, March 30, 2010

পারমানবিক অস্ত্র কিভাবে কাজ করে?

Tuesday, March 30, 2010


নির্মান কৌশলের দিক দিয়ে ফিশান পারমানবিক অস্ত্র দু’প্রকার, গান টাইপ ও ইমপ্লোশন টাইপ। গান টাইপ পারমানবিক অস্ত্রের কার্যপ্রণালী খুবই সহজ-সরল কিন্তু দক্ষতা খুবই কম, মাত্র ১.৪ শতাংশ। অপরদিকে ইমপ্লোশন টাইপের দক্ষতা ২০ শতাংশের কাছাকাছি।

গানটাইপ পারমানবিক অস্ত্রের নির্মানশৈলী অনেকটা বন্দুকের মতন, তাই এর নাম গান টাইপ। একটি লম্বা টিউব, যার গায়ে বেরিলিয়াম মৌলের প্রলেপ লাগানো থাকে, তার দু’প্রান্তে সংকট ভরের চেয়ে কম অর্থাৎ সাব ক্রিটিক্যাল ম্যাসের ফিসাইল পদার্থ ইউরেনিয়াম-২৩৫ রাখা হয়। এক প্রান্তে ইউরেনিয়ামের তৈরি বুলেট ও অপর প্রান্তে একটি নির্দিষ্ট পরিমান ইউরেনিয়াম-২৩৫ জমা থাকে, যাকে বলে টার্গেট। এরপর টিউবের ভেতর সাধারণ বারূদ (কনভেনশনাল এক্সপ্লোসিভ) দিয়ে ইউরেনিয়াম বুলেটকে গতিশীল করা হয় এবং তা অপরপার্শ্বে রক্ষিত টার্গেট ইউরেনিয়ামের সাথে প্রবল বেগে ধাক্কা খায়। সংঘর্ষের পর এরা পরস্পর মিলিত হয়ে সুপার ক্রিটিক্যাল ম্যাস বা অতিসংকট ভর তৈরি করে এবং ফিসাইল পদার্থ হতে নিঃসৃত নিউট্রন কণিকা টেম্পার রিফ্লেক্টরে প্রতিফলিত হয়ে উক্ত ইউরেনিয়াম জ্বালানীকেই আঘাত করে এবং এভাবেই শুরু হয় শৃংখল বিক্রিয়া যার ফলশ্রুতিতে ঘটে পারমানবিক বিস্ফোরণ। ব্যাস তৈরী হয়ে গেল গান-টাইপ পারমানবিক অস্ত্র। জাপানের হিরোসিমায় নিক্ষেপিত ‘লিটল বয়’ ছিলো এই ধরনের অস্ত্র যার শক্তিমাত্রা ছিলো ১৫ কিলোটন টি.এন.টি এবং তাতে ৬৪.১ কিলোগ্রাম বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম ব্যাবহৃত হয়। এ পদ্ধতি সহজ হলেও এর জ্বালানি তথা ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম খুব বিশুদ্ধ হওয়া প্রয়োজন যা কিনা বহুল ব্যায়সাধ্য, এছাড়া পূর্বেই বলা হয়েছে গান-টাইপের দক্ষতা খুবই কম ও নির্ভর যোগ্য নয়। তাই গান টাইপের চেয়ে ‘ইমপ্লোসন’ টাইপ আরও অনেক বেশি কার্যকর, কিন্তু এর গঠন প্রণালী বেশ জটিল।

ইমপ্লোসন টাইপে জ্বালানী হিসেবে ‘পিট’ ব্যাবহৃত হয় যা কিনা লঘু ঘনত্বের ফিসাইল পদার্থ ছাড়া আর কিছুই নয়। এই পিট বিষাক্ত ও ক্ষয়িষ্ণু (করোসিভ ও হ্যাজার্ডাস) বিধায় পিটের চারিপার্শ্বে নিষ্ক্রিয় ধাতু (যেমন স্বর্ণের) পাতলা আবরণ দেয়া হয়, যা গোলাকার আকৃতির। স্বর্ণের পাতলা আবরণ যুক্ত পিট-কে বেরিলিয়াম-অ্যালুমিনিয়াম এর সংকর ধাতু দ্বারা মুড়িয়ে রাখা হয় যা কিনা ফিসাইল পদার্থ হতে নিঃসৃত নিউট্রন কণিকার প্রতিফলক হিসেবে কাজ করে, আগেই বলা হয়েছে-এর নাম টেম্পার রিফ্লেক্টর। এবার সম্পুর্ণ ডিভাইসটিকে কারডাইট বিস্ফোরক বা বারূদের মাঝে রাখা হয়। বহিস্তরের কার্ডাইট বিস্ফোরিত হয়ে শক ওয়েভ বা নিনাদের সৃষ্টি করে যা ভেতরে রাখা অল্প ঘনত্বের পিটকে সংকুচিত করে ফেলে ও এর ঘনত্ব বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে জ্বালানী অতিসংকট ভর বা সুপার ক্রিটিক্যাল মাসে উপনিত হয় এবং জ্বালানী থেকে নিঃসৃত ও টেম্পার রিফ্লেক্টরে প্রতিফলিত হওয়া নিউট্রন কণিকার আঘাতে নিউক্লিয়ার চেইন বিক্রিয়া শুরু হয়। যদি পিটের ভেতর অল্প পরিমানে হাইড্রোজেনের আইসোটোপ (ডিউটেরিয়াম বা ট্রিটিয়াম) ঢুকিয়ে দেয়া হয়, তবে নিউট্রন কণিকা নিঃসরনের মাত্রা বহুলাংশে বেড়ে যায় এবং অধিক ধংশযজ্ঞ সম্পন্ন হয়, একে ‘বুস্টিং’ বলে। ইমপ্লোসন টাইপ পারমানবিক অস্ত্র ‘হাই এনরিচড ইউরেনিয়াম’ জ্বালানী হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। ফলে স্বল্প পরিশোধিত ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম দ্বারা এ ধরনের পারমানবিক অস্ত্র প্রস্তুত সম্ভব, আর এ কারনেই ইমপ্লোসন টাইপ পারমানবিক অস্ত্র বেশি জনপ্রিয়! জাপানের নাগাসাকিতে নিক্ষেপিত “ফ্যাট ম্যান’ এ ধরনের পারমানবিক অস্ত্র ছিলো।

স্নায়ু যুদ্ধের সময় থেকেই মূলত পারমানবিক অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছিল বৃহৎ শক্তিবর্গের মধ্যে, কিন্তু স্নায়ু যুদ্ধের পরবর্তিতেও কিছু যুদ্ধোন্মাদ নেতারা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার খোঁড়া অজুহাত তুলে শত কোটি টাকা অপচয় করে একের পর এক পারমানবিক যুদ্ধাস্ত্র তৈরী করে বিশ্বশান্তিকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। যারা ইস্রায়েলের আগ্রাসী পারমানবিক প্রকল্পের কথা জেনেও চোখ বন্ধ করে রাখে কিন্তু ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমানবিক প্রকল্পে বাধা দেয় ও মিথ্যা অজুহাত তুলে বিভিন্ন দেশ আক্রমন করে, তারাই এখন বিশ্বে এককভাবে পারমানবিক যুদ্ধাস্ত্রের মালিক এবং গোটা বিশ্বের নিয়তী এসব অর্ধোন্মাদ নেতাদের হাতের মুঠোয়। তাই এখন থেকেই আমরা সচেতন না হলে অদুর ভবিষ্যতে আমাদের এই প্রিয় সবুজ পৃথিবী একদিন ঊষর, বন্ধ্যা ও তেজষ্কৃয়তায় পরিপূর্ণ এক নির্জীব গ্রহে পরিনত হবে, যাতে থাকবেনা কোন প্রাণের স্পন্দন।।


তথ্যসুত্রঃ www.fas.org/nuke/intro/nuke/design.htm

Related Posts by Categories





Digg Technorati del.icio.us Stumbleupon Reddit Blinklist Furl Spurl Yahoo Simpy

0 comments:

Post a Comment